নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কাস্টমস ঘাট এলাকায় রাজনৈতিক পরিচয় পরিবর্তনের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে রমরমা ইয়াবা ব্যবসা চালানোর অভিযোগ উঠেছে সিরাজুল মোস্তফা নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি, একসময় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে পরিচিত এই ব্যক্তি বর্তমানে বিএনপি ও যুবদলের পরিচয় ব্যবহার করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সিরাজুল মোস্তফা উখিয়া সিএনজি মালিক সমিতির তৎকালীন সভাপতি মানুন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। সে সময় তিনি আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে সিএনজি মালিক সমিতির সদস্য হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। স্থানীয়ভাবে তাকে আওয়ামী লীগের ‘দাপুটে কর্মী’ হিসেবেই চিনত সবাই।
তবে গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর হঠাৎ করেই সিরাজুল মোস্তফা তার রাজনৈতিক অবস্থান পাল্টে ফেলেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বর্তমানে তিনি নিজেকে বিএনপি ও যুবদলের কর্মী হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় চলাফেরা করছেন এবং রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়া ব্যবহার করে বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
প্রশাসনের ‘সোর্স’ পরিচয়ে ইয়াবা বাণিজ্য?
অভিযোগ রয়েছে, সিরাজুল মোস্তফা নিজেকে প্রশাসনের ‘সোর্স’ হিসেবে পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পরিচয় ব্যবহার করে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়িয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
একাধিক বাসিন্দা জানান, কাস্টমস ঘাট ও আশপাশের এলাকায় ইয়াবা সরবরাহ ও বিক্রির সঙ্গে তার নাম দীর্ঘদিন ধরেই আলোচিত। কেউ কেউ দাবি করেছেন, বিভিন্ন সময় অভিযানের আগাম তথ্য জানার সুযোগ থাকায় তিনি সহজেই নিজেকে আড়াল করতে সক্ষম হন।
সচেতন মহলের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে সিরাজুল মোস্তফার হঠাৎ বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে। স্থানীয়দের দাবি, একসময় দিনমজুর হিসেবে কাজ করা এই ব্যক্তি বর্তমানে একটি আলিশান বাড়ির মালিক। পাশাপাশি তার নামে রয়েছে একাধিক ড্রাম্পার ও (এক্সনোহা)।
“দিনমজুরের আয় দিয়ে এত অল্প সময়ে এত সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়। এর পেছনে অবৈধ আয়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।”
সামাজিক অবক্ষয়ের অভিযোগ।
এছাড়া সিরাজুল মোস্তফার বাড়িতে নিয়মিত মদের আড্ডা বসে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিবেশীদের মতে, এসব আড্ডায় মাদকসেবী ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের আনাগোনা দেখা যায়, যা এলাকার সামাজিক পরিবেশ ও যুবসমাজের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে।
এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, রাজনৈতিক পরিচয় বদল ও প্রশাসনিক ‘সোর্স’ পরিচয়ের কারণে তিনি এখনো ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।
স্থানীয়দের প্রশ্ন—একজন সাবেক আওয়ামী লীগ কর্মী কীভাবে এখনো বিএনপি পরিচয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং প্রকাশ্যে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন?
এলাকাবাসী ও সচেতন মহল অবিলম্বে সিরাজুল মোস্তফার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছেন। একই সঙ্গে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সিরাজুল মোস্তফার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।