
নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজার–টেকনাফ মহাসড়কের পাশে উখিয়ার বালুখালী ময়নাঘোনা মরা গাছতলা এলাকায় বনবিভাগের সংরক্ষিত সরকারি জমি দীর্ঘদিন ধরে কার্যত দখলমুক্ত নয়, বরং অবৈধ দখলদারদের নিরাপদ আশ্রয়ে পরিণত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে সেখানে গড়ে উঠেছে পাঁচ শতাধিক অবৈধ দোকান ও স্থাপনা, যার একটি বড় অংশ সরাসরি বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণ করতেছে।
অভিযোগ রয়েছে, এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠার পেছনে প্রশাসনের একটি প্রভাবশালী অংশের নীরব সমর্থন ও দায়িত্বহীনতার সুযোগ নেওয়া হয়েছে।
এই দীর্ঘদিনের অনিয়ম ঢাকতেই গত ২৭ নভেম্বর উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুল হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বে বনভূমি উদ্ধারের নামে একটি তথাকথিত উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের সহযোগিতায় পরিচালিত ওই অভিযানে ২৫০টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে বলে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করা হয়।
কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে—এই দাবি বাস্তবতার সঙ্গে চরমভাবে সাংঘর্ষিক।
উচ্ছেদের নামে দায় এড়ানোর কৌশল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভিযানের পরও অধিকাংশ দোকান অক্ষত রয়েছে। কোথাও স্থায়ীভাবে স্থাপনা অপসারণ, জায়গা সমতলকরণ বা পুনর্দখল ঠেকানোর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং অভিযানের কয়েক ঘণ্টা পরেই পুনরায় দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়, যেন কিছুই ঘটেনি।
স্থানীয়রা বলছেন,
“এই উচ্ছেদ আসলে উচ্ছেদই নয়—এটা ক্যামেরার সামনে নাটক করে দায় ঝেড়ে ফেলার কৌশল।”
কার স্বার্থে এই লোক দেখানো অভিযান?
এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে বনভূমি দখলকারীরা প্রশাসনের ভেতরের কিছু অসাধু ব্যক্তির আশীর্বাদে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে কাগজে-কলমে দায়িত্ব শেষ করা হচ্ছে, যাতে ওপর মহলে ‘উচ্ছেদ হয়েছে’—এমন বার্তা দেওয়া যায়।
বিশেষ করে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নানের ভূমিকা ঘিরে প্রশ্ন আরও ঘনীভূত হয়েছে। ২৫০টি দোকান উচ্ছেদের দাবি করা হলেও বাস্তবে বনভূমি উদ্ধারের কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ নেই।
তাহলে প্রশ্ন উঠছে—
এই ২৫০ দোকান উচ্ছেদের তালিকা কোথায়?
কোন কোন স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে?
উচ্ছেদের পর পুনর্দখল ঠেকাতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?
এই প্রশ্নগুলোর কোনো সুস্পষ্ট উত্তর নেই।
বনভূমি রক্ষা নাকি দখল টিকিয়ে রাখার ছলনা?
পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে দায়সারা ও নাটকীয় অভিযান চলতে থাকলে উখিয়ার সংরক্ষিত বনভূমি খুব শিগগিরই সম্পূর্ণ দখল হয়ে যাবে। শুধু ঘোষণা, প্রেস বিজ্ঞপ্তি আর লোক দেখানো অভিযানে বন রক্ষা সম্ভব নয়—প্রয়োজন নিয়মিত, কঠোর ও স্বচ্ছ উচ্ছেদ কার্যক্রম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন,
“আমরা অভিযান চালিয়েছি। শিগগিরই যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—
আগের অভিযানের ফল যখন শূন্য, তখন ‘শিগগিরই’ বলা নতুন যৌথ অভিযান কতটা বাস্তব হবে?
বনভূমি কি সত্যিই দখলমুক্ত হবে,
নাকি ‘উচ্ছেদ অভিযান’-এর নামে এই দায় এড়ানোর নাটক চলতেই থাকবে—
আর প্রশাসনের নীরবতায় ধ্বংস হতে থাকবে উখিয়ার সংরক্ষিত বনভূমি?