নিজস্ব প্রতিবেদক নাইক্ষ্যংছড়ি:
পাহাড় ও ঝিরি-ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর পার্বত্য বান্দরবান জেলার প্রাকৃতিক ভারসাম্য আজ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে। উঁচু-নিচু পাহাড় আর সবুজ অরণ্যে ঘেরা এই অঞ্চল জুড়ে এখন গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ করাতকল ও ইটভাটা, যা ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে পাহাড়ের প্রাকৃতিক রূপ।
শুধু নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলাতেই রয়েছে ২০টিরও বেশি অবৈধ করাতকল এবং ১২টির মতো অননুমোদিত ইটভাটা। এসব স্থাপনা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় বছরের পর বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কিছু রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সহযোগিতায় এসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়। পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের একাধিক অভিযানের পরও বন্ধ হয়নি এদের কার্যক্রম।
জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই অবৈধ ইটভাটা ও করাতকল বন্ধে কড়া নির্দেশনা দেন। কিন্তু প্রশাসনের নীরবতা ও যোগসাজশের কারণে বান্দরবানে এসব অবৈধ কার্যক্রম এখনো অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সব অবৈধ/অননুমোদিত ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, নিষেধাজ্ঞা জারির পরও ইটভাটাগুলো পূর্ণোদ্যমে প্রস্তুতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রশাসনের নাকের ডগায় চলছে পাহাড় কাটা, ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন, বন ধ্বংস ও গাছ কাটা — অথচ কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ ও পরিবেশ সচেতন নাগরিকরা।
পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, এভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চলতে থাকলে একদিন বান্দরবানের পাহাড়ি সৌন্দর্য হারিয়ে গিয়ে পরিণত হবে এক নির্জীব মরুভূমিতে।
নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও কিভাবে ইটভাটার কার্যক্রমের প্রস্তুতির নিচ্ছে বিষয়'টি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কাছে জানতে চাইলে - তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযান করার আশ্বাস দেন
অন্যদিকে জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, কোনভাবেই এসব অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে শিগগিরই।
স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি — প্রশাসনের আন্তরিক পদক্ষেপ ও নিয়মিত নজরদারি ছাড়া পাহাড় ও বন রক্ষা করা সম্ভব নয়।