কক্সবাজার প্রতিনিধি,
হাসপাতালের ডাক্তার সংকটকে পুঁজি করে রোগী পাচার, প্রাইভেট ক্লিনিকে গলাকাটা বানিজ্য
কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে দীর্ঘদিনের ডাক্তার সংকটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী দালাল সিন্ডিকেট। রাতের বেলা সিজার বা নরমাল ডেলিভারি না হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে এই সিন্ডিকেট রোগীদের সরকারি হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায় প্রাইভেট ক্লিনিকে। এ নেটওয়ার্কের মূল নিয়ন্ত্রক হিসেবে উঠে এসেছে শহরের এক সময়ের দাপুটে যুবলীগ নেত্রী সেফালীর নাম।
তদন্তে জানা গেছে, হাসপাতালের দারোয়ান, ওয়ার্ডবয়সহ অসংখ্য দালাল মিলে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। তারা রোগী ও স্বজনদের ভয়ভীতি এবং প্রলোভন দেখিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠায়। বিশেষ করে শহরের জেনারেল, সি সাইট, সেন্ট্রাল, ডিজিটাল ও ইউনিয়ন হাসপাতালগুলোতে সবচেয়ে বেশি রোগী পাঠানো হচ্ছে।
রোগীদের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালে কম খরচে বা বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়ার কথা থাকলেও, সিন্ডিকেটের কারণে তারা প্রাইভেটে গিয়ে গলাকাটা চাঁদার শিকার হচ্ছেন। একটি নরমাল ডেলিভারির জন্য আদায় করা হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, আর একটি সিজারের জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। স্থানীয়রা বলছেন, এই অর্থের বড় অংশ সিন্ডিকেটের হাতে যায়, বাকিটা ভাগ হয় দালালদের মধ্যে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন, সিন্ডিকেটের নির্দেশ অমান্য করলে সেফালী অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং প্রকাশ্যে হুমকি দেন। এক সিনিয়র চিকিৎসক বলেন—“রোগীদের সরকারি হাসপাতালে রাখতে চাইলে আমাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করা হয়। ফলে সঠিকভাবে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না।”
সেফালীর সিন্ডিকেটকে টিকিয়ে রাখতে সহায়ক হয়েছে তার রাজনৈতিক পরিচয় এবং স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কক্সবাজারের কয়েকজন সংবাদকর্মী ও প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক ব্যবহার করে তিনি দীর্ঘদিন ধরে তার দালালি নেটওয়ার্ককে অটুট রেখেছেন। এর ফলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতাও ভয়াবহ। কলাতলী এলাকার এক স্বজন জানান—“আমার ভাবিকে হাসপাতালে ভর্তি করার পর দালালরা ভয় দেখায়—এখানে ডাক্তার নাই, রোগী মারা যাবে। বাধ্য হয়ে ক্লিনিকে নিয়ে গেলে আমাদের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নেওয়া হয়।” অন্য এক ভুক্তভোগী বলেন—“সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা না পেয়ে আমরা প্রাইভেটে যাই। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি আমাদের পকেট ফাঁকা করার ফাঁদ পাতা।”