শ.ম.গফুর,উখিয়া
মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরে বানের পানির মত পাচার হয়ে আসছে ইয়াবা’র চালান।সীমান্তবর্তী এলাকায় হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা।পূর্বের চেয়ে ইয়াবার সহজলভ্যতা যেনো নাগালের ভিতর। আবার এসব ইয়াবার পাচার রোধে সীমান্তরক্ষী বাহিনী সহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাও রয়েছে কঠোর অবস্থানে।প্রায় প্রতিদিন উখিয়া,টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত অতিক্রম করে আসা ইয়াবা জব্দ কিংবা আটকের ঘটনাও ঘটছে।গত ২৪ ঘন্টায় উখিয়া,টেকনাফ ও রামুতে উদ্ধার করা হয়েছে ১ লাখ ৩৭ হাজার ২শত পিস ইয়াবা। এসব মাদক পাচারে জড়িত দুই রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ সহ ১০ জন’কে গ্রেফতার করা হয়েছে।মাদক বহনে ব্যবহ্নত একটি সিএনজি, একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়েছে।এতে বেশ কিছু নগদ টাকা ও মোবাইল জব্দ করা হয়েছে।
জব্দ করা ইয়াবা’র অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা সুত্রে জানা গেছে,গত ২৮ জুলাই
(সোমবার)সকালে অভিনব কায়দায় পাচার কালে প্রাইভেট কারের গ্যাস সিলিন্ডারে রক্ষিত ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ মাদক পাচারকারীকে আটক করেন উখিয়ায় থানা পুলিশের একটি দল। এ সময় ইয়াবা পরিবহনে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কারও জব্দ করা হয়েছে।উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের কুতুপালং পশ্চিম পাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব ইয়াবা উদ্ধার, গাড়ী জব্দ ও পাচারকারীদের আটক করা হয়।উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আরিফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসবে আটককৃতরা হলেন,উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের থাইংখালী রহমতেরবিল এলাকার বাসিন্দা রফিক উদ্দিনের ছেলে মামুনুর রশিদ (২৪), কক্সবাজার পৌরসভার পশ্চিম চৌধুরীপাড়াস্থ সাবমেরিন ক্যাবল সড়কের বিজিবি ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা নুরুল আবছারের ছেলে নুরুল ইসলাম (২৬) একই এলাকার নুরুল আবছারের আরেক পুত্র মো. কবির (২৩)।
একইদিন বিকেল ৩টায় উখিয়ার বালুখালী পুলিশ ফাঁড়ীর একটি দলের অভিযানে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার এবং এক মাদক পাচারকারী রোহিঙ্গা’কে আটক করেছে। বালুখালী পুলিশ ফাঁড়ির এসআই নোমানের নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বালুখালী টিভি টাওয়ার সংলগ্ন ৭নং ক্যাম্পের এ-৬ ব্লকে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।এ সময় রোহিঙ্গা আশরাফ আলীর(আশুর) বসতঘর থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।ঘটনাস্থল থেকে
৭নং ক্যাম্পের এ-৬ ব্লকের আবুল কালাম’র ছেলে আশরাফ আলী আশু (৩৯)কে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় মামলা নং-৫৫, তারিখ: ২৮/০৭/২০২৫, ধারা: মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ এর ৩৬(১) সারণির ১০(গ) অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
২৮ জুলাই সন্ধ্যা অনুমান ৬টার দিকে উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি)’র অধীনস্থ পালংখালী বিওপি’র টহল দল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আঞ্জুমানপাড়া বেড়ীবাধে স্থানে অবস্থান করেন।
৯টার দিকে ২জন জেলে সীমান্ত হতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে দেখলে টহলদল তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে।জেলের ছদ্মবেশে থাকা মোঃ শামসুল আলম(৩৫)কে আটক করা হয়।সে টেকনাফের হোয়াইক্যংয়ের মো: ভুলু মিয়ার ছেলে।এ সময় তার পিঠে বহনকৃত ব্যাগ থেকে ৫০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয় বলে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেন উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪বিজিবি)’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন পিএসসি।
একইদিন(সোমবার) সকাল সাড়ে ১১ টারদিকে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের ৩০ বিজিবি’র অধীনস্থ গোয়ালিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার ২শত পিস ইয়াবাসহ এক রোহিঙ্গা নারী’কে আটক করেছে মরিচ্যা যৌথ চেকপোস্টের একটি বিশেষ টহল দল। এ অভিযানকালে গোয়ালিয়া চেকপোস্টে একটি সন্দেহজনক সিএনজি থামিয়ে যাত্রী রোহিঙ্গা নারী নজুমা বেগম (৩৫)’র শরীর তল্লাশি করে বিশেষ কায়দায় লুকানো ১০ হাজার ২শত পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক নারী কুতুপালং ২ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ডি-৪ ব্লকের বাসিন্দা এবাদুল্লাহর স্ত্রী।
রামু ব্যাটালিয়ন’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কাজী মাহতাব উদ্দিন আহমেদ জানান, সীমান্তের নিরাপত্তা ও মাদকদ্রব্য দমনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে বিজিবি। আটক নারী কারবারির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে রামু থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলেও সত্যতা নিশ্চিত করেন তিনি।
একইদিন টেকনাফ থানা পুলিশের অভিযানে আব্দুল জলিল (৩৫)’র হেফাজত থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।সে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের রোজার ঘোনার মৃত আবদুল গফুরের ছেলে।ইয়াবা বহনে ব্যবহ্নত এক টি সিএনজি অটোরিক্সা জব্দ করা হয়।যার রেজিঃনং-কক্সবাজার-থ-১১-৭৩৬৩। অপর আরেক অভিযানে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়ার মৃত সাদ আক্কাসের ছেলে সিরাজুল ইসলাম (৩২) ও বরিশালের হিজলা থানার চর দুর্গাপুরের বাসিন্দা নাদের বকস’র ছেলে মিজু মিয়া প্রঃ মিজানুর রহমান (৪২)কে আটক করা হয়।তাদের হেফাজত থেকে ২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার ও নগদ ২৩ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় পৃথক দুইটি মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ থানার ওসি
মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। অপরদিকে একইদিন রাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ৫ হাজার পিস ইয়াবা নিয়ে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার এলাকার মো. ফারুক নামে এক সিএনজি চালক’কে আটক করেছে। এ সংক্রান্তে মামলা রুজু হয়েছে বলে জানা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে,টেকনাফের সেন্টমার্টিন, শাহপরীরদ্ধীপ,টেকনাফ,বরইতলী,জাদীমোড়া,
লেদা,হ্নীলা,মৌলবীবাজার,খারাংখালী,হোয়াইক্যং,উলুবনিয়া,কাটাখালী,উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমান পাড়া,রহমতেরবিল,ধামনখালী,
বালুখালী, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের নয়াপাড়া,
জলপাইতলী,তেঁতুল গাছতলা,তুমব্রু পশ্চিমকুল,চাকমাপাড়া,বাইশফাঁড়ী,আমতলী,
রেজু পাড়া সহ বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট অতিক্রম করে মাদকের চালান ঢুকছে দেদারছে।ইয়াবা জব্দ হলেও প্রকৃত গডফাদাররা অধরাই থেকে যাচ্ছে।আটক হচ্ছে চুনোপুঁটিরা। #