মোঃ শহিদ,
কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে র্যাব পরিচয়ে ভয়াবহ অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির ঘটনার নাটকীয় মোড়- এ ঘটনায় ব্যবহৃত র্যাবের ইউনিফর্ম, নকল আইডি কার্ড, দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র ও হ্যান্ডকাপসহ কুখ্যাত সন্ত্রাসী মোঃ জায়েদ হোসেন ফারুককে আটক করেছে র্যাব-১৫।
আটককৃত ফারুকের পরিচয়, উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পশ্চিম মরিচ্যা এলাকার আব্দুল শুক্কুরের ছেলে মোঃ জায়েদ হোসেন ফারুক (২২)।
র্যাব সূত্রে জানা গেছে, গত ১১ জুন রাতে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প-১৫ থেকে মোঃ হাফিজ উল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গাকে র্যাব পরিচয়ে তিন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অপহরণ করে। অপহরণকারীরা হল বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন, সন্ত্রাসী ফারুক এবং কুখ্যাত ডাকাত শিকদার। তারা হাফিজ উল্লাহকে রঙ্গিখালী গহীন পাহাড়ে নিয়ে যায় এবং পরে ভিকটিমের পরিবারের কাছে ১৫ লক্ষ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
একাধিক অভিযান, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার অপহরণের সংবাদ পাওয়ার পরপরই র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল রঙ্গিখালী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এবং সন্দেহভাজন আফ্রিদি ও আব্দুল গফুরকে আটক করে। পরদিন মরিচা বাজার এলাকা থেকে আটক করা হয় অপহরণের মূল হোতা বরখাস্তকৃত সৈনিক মোঃ সুমনকে। পরে সুমনের তথ্য অনুযায়ী বনবিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও এপিবিএন-এর সমন্বয়ে যৌথ অভিযানে ১৫ জুন গহীন অরণ্য থেকে হাফিজ উল্লাহকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। উদ্ধার অভিযানে উদ্ধার করা হয় দেশীয় অস্ত্র, র্যাবের পোশাক, ওয়াকিটকি ও গোলাবারুদ।
আটকের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ২৭ জুন কুখ্যাত ডাকাত শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী উখিয়ার পশ্চিম মরিচ্যা থেকে সন্ত্রাসী ফারুককে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয় অপহরণে ব্যবহৃত ৪টি র্যাবের ইউনিফর্ম, একটি ফেইক আইডি কার্ড, হ্যান্ডকাপ, বিদেশী পিস্তল, দুইটি দেশী অস্ত্র, ১০ রাউন্ড তাজা গুলি, ১১ রাউন্ড খালি খোসা ও একটি ছুরি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ কামরুল হাসান বলেন, "আটককৃত সন্ত্রাসীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, বরখাস্তকৃত সৈনিক সুমন তার র্যাবে চাকরির অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজে মিরপুরের শাহ আলী মার্কেট থেকে র্যাবের পোশাক তৈরি করতো। ইউনিফর্ম তৈরি করতে ব্যয় হতো ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এই পোশাক পরে দীর্ঘদিন ধরে তারা র্যাব পরিচয়ে অপহরণসহ নানা অপরাধ করে আসছিল। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।"
তিনি আরও বলেন, "রাষ্ট্রীয় বাহিনীর পোশাক ব্যক্তিগতভাবে তৈরি ও ব্যবহার করা গুরুতর অপরাধ। আমরা টেইলার্স ও পোশাক প্রস্তুতকারীদের সর্তক করে দিতে চাই যে, এ ধরনের কাজে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।"
এদিকে হাফিজ উল্লাহ অপহরণের ঘটনায় জড়িত বেশিরভাগ সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলেও, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন ও কুখ্যাত ডাকাত শাহআলম এখনও পলাতক। র্যাব সূত্র জানায়, তাদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।