শ.ম গফুর / মোঃ শহিদ,
পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর(এসআই)প্রভাকর বড়ুয়া ভালো মানুষ। তার অপকর্ম নিয়ে কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটু লিখলেই তার পক্ষ নিয়ে গুটিকয়েক ব্যক্তি ভালো মানুষ হিসেবে সার্টিফাইড করতো তাকে।এই প্রভাকর বড়ুয়া উখিয়া থানায়(বর্তমানে রামুর হিমছড়ি পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত) কর্মরত থাকাবস্থায় ছোটখাটো টাকা খেতোনা,বলে বেড়াতেন তার আশির্বাদপুষ্ট দালাল’রা।জায়গায়-জায়গায় ছিল তার নিযুক্ত দালাল।সেসব দালালরা তার পক্ষ হয়ে শালিস বাণিজ্যের তদবির,মামলায় সংযুক্ত করা আর বাদ দেওয়ার লেনদেন করতো।প্রভাকর বড়ুয়া উখিয়া থানার মালখানার দায়িত্বেও ছিল।ওখানেও জব্দকরা মাদক এদিক-সেদিক করেছে, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। টাকার জোরে মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দাখিল আবার টাকার মোহে মামলা থেকে বাদ দেওয়া ছিল তার মামুলি ব্যাপার।গত ৭ মাসের ব্যবধানে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে প্রভাকর বড়ুয়া উখিয়ার পেশাদার সংবাদকর্মী শ.ম.গফুর এর বিরুদ্ধে কোর্টে দায়ের করা অভিযোগের এক তরফা মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন আদালতে।তাতে অস্তিত্বহীন ভুয়া স্বাক্ষী,থানা হাজত থেকে আদালত এবং আদালত থেকে কারাগারে প্রেরিত আসামীও স্বাক্ষী দেখিয়েছেন। খোদ বাদীর নিজ সন্তানদের নিরপেক্ষ স্বাক্ষী দেখিয়ে অন্তর্ভুক্ত করেছে সম্পুরক স্বাক্ষী হিসেবে।জায়গা-জমি ও টাকা পাওনার বিরোধে শ.ম. গফুর এর বাবার প্রতিপক্ষের (বাদীসহ) দুই পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা স্বাক্ষী সৃজন করেছেন।যে ঘটনা দেখিয়েছে তার সঠিক তথ্য গ্রহণে ঘটনাস্থলের পাড়া-প্রতিবেশী বা স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তি কিংবা জনপ্রতিনিধি কারো স্বাক্ষ্য নেন নি।অথচ ঘটনাটি সাজানো, মিথ্যা অবহিত করে অধিকতর তদন্তের জন্য স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বার,চৌকিদার,সমাজ কমিটি, মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটি লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।লোকেশন সনাক্তের দাবিও জানিয়েছিলেন। অভিযোগে বাদীর মানিত স্বাক্ষীদের মধ্যে মোহাম্মদ আলম নামের একজন স্বাক্ষী মিথ্যা কথা বলতে পারবেন না বলায় স্বাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করেন নি।বাদিনী ও স্বাক্ষীদের হাতে হত্যাচেষ্টার শিকার সাংবাদিক গফুর এর বাবা ও মাতার নিরপেক্ষ স্বাক্ষী গ্রহণ করেন নি।কোন প্রকার নিরপেক্ষ স্বাক্ষী নেই।একেবারে মনগড়া মিথ্যা তদন্ত রিপোর্ট দিয়ে বাদিনীর নিমন্ত্রণে বাদিনীর বাড়িতে রাত-গভীরে গিয়ে ভূরিভোজ আর তরল উল্লাসে মেতে উঠেছিল প্রভাকর বড়ুয়া, এমন অভিযোগ রয়েছে। নিরীহ মানুষ ফাঁসানো, এজাহারভুক্ত আসামীদের বাদ দেওয়া প্রভাকর বড়ুয়ার যেনো বাণিজ্যিক দায়িত্ব মনে করতেন।
তার চাঞ্চল্যকর আরেকটি গুণধর দায়িত্ববান হিসেবে উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের রহমতের বিল এলাকায় শাহজাহান হত্যা মামলায় বিশাল বাণিজ্য করেছেন বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা।তিন আসামী’কে মোটাংকের টাকার বিনিময়ে অভিযোগপত্র(চার্জশীট) থেকে বাদ দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উখিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর (এসআই)প্রভাকর বড়ুয়ার বিরুদ্ধে।রহস্যজনক ভাবে ৩জন আসামী’কে বাদ দেওয়ার ঘটনায় বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি
এলাকাবাসী ও অপরাপর আসামীদের। তা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
দায়েরকৃত মামলার এজাহার সুত্র ও অনুসন্ধানে জানা গেছে,গত ০৮/১১/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ তারিখ,রাত অনুমান ৩ টার দিকে পালংখালী ইউপির ২ নং রহমতের বিল-ধামনখালী সড়কের জনৈক নুরুল ইসলামের বাড়ির সামনে চিতাখোলা ব্রীজের নীচ থেকে শাহজাহানের মরদেহ উদ্ধার করেন পুলিশ।এ ঘটনায় নিহত শাহজাহানের স্ত্রী জোসনা আক্তার(৪০) বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে উখিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা নং-২৯/২০২৩,তারিখ-১০/১১/২০২৩ খ্রিস্টাব্দ। এতে মামলায় আসামীরা হলেন উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের ধামনখালী এলাকার জবর মুল্লুকের ছেলে মনির আলম(৩০) একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সৈয়দ আহমদের ছেলে কামাল প্রকাশ ল্যাংটা কামাল(২৮),৩নং ওয়ার্ডের রহমতের বিল এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে মোস্তাফিজ(৩১),২ নং ওয়ার্ডের ধামনখালী এলাকার জবর মুল্লুকের ছেলে সাইফুল ইসলাম প্রশাশ শেপ্পা(৩৩), ৩ ওয়ার্ডের রহমতের বিল এলাকার আবুল কালামের ছেলে ওসমান গণি(৩২), একই এলাকার মৃত ইসহাকের ছেলে সালাহ উদ্দিন(৩২), একই এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে জানে আলম(৩৫),একই ওয়ার্ডের উত্তর রহমতের বিল এলাকার মৃত হোসেন আলীর ছেলে ফারুক(৩০) একই ওয়ার্ডের রহমতের বিল এলাকার জহির আলমের ছেলে জিয়া উদ্দিন প্রকাশ তারেক(২৫) ও ২ নং ওয়ার্ডের বালুখালী এলাকার বার্মাইয়া আলমগীর(৩০) সহ অজ্ঞাত আরোও ৪/৫ জন।মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন ১নং আসামী মনির আলম মোবাইল ফোনে শাহজাহান’কে ডেকে নিয়ে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে অপরাপর আসামীদের নিয়ে হত্যা করে লাশ ব্রীজের নিচে ফেলে পালিয়ে যান।
ওই মামলায় ১নং আসামী মনির আলম(৩০) ও ২ নং আসামী কামাল প্রকাশ ল্যাংটা কামাল গ্রেফতার হয়ে দীর্ঘদিন কারাভোগ করে জামিনে বেরিয়ে আসেন।
শুরুতেই উখিয়া থানায় কর্মরত এসআই এবিএম তারেক হোসেন’কে উক্ত মামলার তদন্তভারের দায়িত্ব অপর্ন করা হয়।তদন্তকালীন সময়ে এসআই তারেক হোসেন অন্যত্র বদলী হয়ে উখিয়া থানা থেকে চলে যান।পরবর্তী তদন্তভার দায়িত্ব পান উখিয়া থানার সেকেন্ড অফিসার খ্যাত ও মালখানার দায়িত্ব প্রাপ্ত সাব ইন্সপেক্টর(এসআই) প্রভাকর বড়ুয়া।
প্রভাকর বড়ুয়া উক্ত মামলার তদন্তের দায়িত্ব সেরেছেন এজাহার ভুক্ত ৩ জন আসামীর অব্যাহতি চেয়ে এবং অপরাপর আসামীদের অভিযুক্ত করে(চার্জশীটভুক্ত) অভিযোগপত্র দেন।অভিযোগ উঠেছে দায়সারা ভাবে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করে মোটা টাকার বিনিময়ে এজাহারভুক্ত ৫নং আসামী ওসমান গণি,৭ নং আসামী জানে আলম,৮ নং আসামী ফারুক সহ ৪ জন’কে ঘটনার দায় থেকে অব্যাহতি চেয়ে কক্সবাজারস্থ বিজ্ঞ আদালতে (চার্জশীট) অভিযোগপত্র দাখিল করেন গত ০৯/০৯/২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখ।নামোল্লেখিত ৩ জন’কে মোটা টাকার বিনিময়ে এজাহার থেকে বাদ দিয়েছেন এসআই প্রভাকর বড়ুয়া,এমন গুঞ্জন চলছে এলাকায়।স্থানীয়দের মাঝে প্রশ্ন উঠেছে বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা কত টাকার বিনিময়ে ৩ আসামী’কে বাদ দিয়েছেন।
৩ আসামী’কে বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দেওয়ার ঘটনায় অপরাপর আসামীরা নির্দোষ দাবি করে বলেন,তারা এ ঘটনায় জড়িত নয়।ঘটনার তারিখ এবং লোকেশন ট্র্যাকিং করলে অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে দাবি করেন।তারা জানান,
তদন্ত কর্মকর্তার চাহিদা মাফিক টাকা দিতে না পারায় তাদের’কে অভিযুক্ত করে চার্জশীটভুক্ত করা হয়েছে। উক্ত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত অপরাপর আসামীদের দাবি তাদের পরিকল্পিত ভাবে ফাঁসিয়েছে।এজাহারে ১০ আসামীর প্রায় পরিকল্পিত ভাবে শাহজাহান’কে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।অথচ চার্জশীটে বাদী এবং তদন্ত কর্মকর্তা কিভাবে ৪ জন’কে ঘটনায় জড়িত নয় উল্লেখ করেছেন? বাদ দেওয়া আসামীরা জড়িত না হলে অন্য আসামীরাও তাহলে জড়িত নয় এমন প্রশ্ন তুলেছেন অন্য আসামীরা।আর যারা স্বাক্ষী হয়েছেন বা স্বাক্ষী দিয়েছেন, তারা ঘটনার সময় গভীর রাতে ওখানে কি করছিলেন,কেনইবা তারা লাশ উদ্ধারের ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন প্রশ্ন রাখেন।তবে লাশ উদ্ধার হয়েছে দিনের বেলায় সকালে।ওই সময় শত-শত উৎসুক জনতা ছিল।
আসামী বাদ দেওয়ার বিষয়ে মামলার বাদী নিহত শাহজাহানের স্ত্রী জোসনা আক্তারের নিকট মুঠাফোনে জানতে চাইলে,তিনি বলেন,৩ জন আসামী বাদ দিয়েছে জানি।তাদের মামলায় কেনো আসামী করেছিলেন? প্রতিউত্তরে বলেন,মামলায় কাকে, কারে আসামী করেছিল আমি জানি না,আমি আসামী দিই নাই।ওই সময় আমার মাথা ঠিক ছিল না।মাথা ঠিক হওয়ার পর তারা আমার আসামী নয় বলে জেনেছি,তাই কেটে দিয়েছে।টাকার লেনদেন হয়েছে নাকি প্রশ্ন করলে জানি না বলে এড়িয়ে যান।৩ জন বাদ দিয়েছেন,অন্যরাতো হত্যার ঘটনায় জড়িত নয় বলে দাবি করছেন বলা হলে জোসনা আক্তার বলেন,তারা আগে হুমকি-ধমকি দিয়েছিল।
চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত ১২ নং স্বাক্ষী পালংখালী ইউপি’র ৬ নং ওয়ার্ডের(তেলখোলা এলাকার) ইউপি সদস্য কামাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, লাশ উদ্ধার করার সময় পুলিশ স্বাক্ষী হিসেবে দস্তখত নিয়েছে।শাহজাহান’কে কারা মেরে ফেলেছে আল্লাহ জানে।আমি জানি না।
মামলার চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত ১৩নং স্বাক্ষী পালংখালী ইউপি’র ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মিছবাহ উদ্দিন সেলিম এ প্রসঙ্গে বলেন,আমি রাতের ৩ টায় ওখানে যায় নাই।সকালে লাশ উদ্ধারের সময় গিয়েছিলাম, সেখানে হাজার-হাজার মানুষ ছিল।ওই সময় কামাল মেম্বার,আলতাজ মেম্বারও ছিল।কে বা কারা মেরেছে আমি জানি না।আমাকে স্বাক্ষী দিয়েছে,তাও জানি না।
মামলার চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত ১০নং স্বাক্ষী পালংখালী ইউপি’র ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য
আলতাজ আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন,আমি লাশ উদ্ধারের সময় উপস্থিত ছিলাম।কে বা কারা মেরেছে আমি কিছুই জানি না।
শাহজাহান হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই প্রভাকর বড়ুয়া ৩ আসামী বাদ দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন,যাদের’কে বাদ দিয়েছি,তাদের বিরুদ্ধে বাদীর কোন স্বাক্ষী ছিল না।মামলা করাকালিন সময় বাদিনীর মাথা ঠিক ছিল না।বাদ দেওয়ার আসামীদের বাদ দেওয়ার জন্য বাদিনী কোর্টে আবেদন করেছিল।
উখিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আরিফ হোসেন’র নিকট একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিয়েও রিসিভ না করায় বক্তব্য পাওয়া যায় নি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক ও অতিরিক্ত দায়িত্ব ক্রাইম ও অপারেশন অফিসার জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত নয়।তদন্তের বাদীর অভিযোগ থাকলে বা বাদী চাইলে বাদ দিতে পারে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতেছি।
।