নিজস্ব প্রতিবেদক :
কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত রোহিঙ্গাদের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক সহায়তা সামগ্রী পাচারের উদ্দেশ্যে মজুদ করার অভিযোগে কক্সবাজারের উখিয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে চারজনকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত উখিয়া উপজেলার বালুখালী ও কুতুপালং এলাউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পরিচালিত এই মোবাইল কোর্টে জরিমানার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে চাল, চিনি, ডাল, তেল, সাবান ও পুষ্টি উপকরণ, যেগুলো জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডাব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণের জন্য সরবরাহ করে থাকে এবং যা বিক্রয়যোগ্য নয়।
অভিযুক্ত চার জন হলেন, ১. মফিদুল আলম (৩৫) পিতা: ফরিদ আলম ঠিকানা: বালুখালী ছড়া, ২নং ওয়ার্ড, জব্দকৃত পণ্য: চিনি ১৬১ বস্তা, ডাল ১৪ বস্তা, চাল ৩৪ বস্তা, তেল ১৮০ লিটার। ২. আলী হোসেন পিতা: মৃত আশরাফ আলী ঠিকানা: কুতুপালং দক্ষিণ পাড়া, ৯নং ওয়ার্ড, রাজাপালং ইউনিয়ন, জব্দকৃত পণ্য: চাল ৮৩ বস্তা, চিনি ৫১ বস্তা, ডাল ৪ বস্তা, তেল ৩২৭ লিটার, সাবান ২৮৮ পিস, পুষ্টি খাদ্য ৬ বস্তা। ৩. ইউনুছ আলী পিতা: মকতুল আহমদ ঠিকানা: বালুখালী, ২নং ওয়ার্ড, জব্দকৃত পণ্য: চাল ১৪২ বস্তা, চিনি ৬২ বস্তা, তেল ৮০০ লিটার। ৪. ইসমাইল হোসেন পিতা: সৈয়দ কাশেম ঠিকানা: দরগাহবিল, উখিয়া সদর জব্দকৃত পণ্য: চিনি ১৮ বস্তা (৫০ কেজি করে), চাল ৮০ বস্তা, তেল ৫০০ লিটার, সাবান (লাক্স) ১০০ পিস, হলুদ গুঁড়া ৪ বস্তা।
উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, তারা রোহিঙ্গা শিবির থেকে বিভিন্নভাবে সংগ্রহ করা ত্রাণ সামগ্রী নিজেদের গুদামে মজুদ করে তা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে পাচার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই কর্মকাণ্ড ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬’ এর ধারা ৬ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা করে।
বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ কামরুল হোসেন চৌধুরী বলেন, “রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা পাচারের চেষ্টা একটি গর্হিত ও মানবতাবিরোধী অপরাধ। এই ধরনের অপতৎপরতা কঠোরভাবে দমন করা হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে এই এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চলবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই কিছু অসাধু ব্যক্তি রোহিঙ্গাদের দেওয়া ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহ করে মজুদ ও পাচার করে আসছিল। প্রশাসনের নজরদারি জোরদার করার ফলে প্রথমবারের মতো এত বড় পরিমাণে ত্রাণ সামগ্রীসহ চক্রটির মূল হোতাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হলো।
জব্দকৃত পণ্যসমূহ সংরক্ষণ ও আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান উপজেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির আওতায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাসও দেন কর্মকর্তারা।